চাকুরীজীবিদের রিটার্নে কোন কোন তথ্য প্রদান করা আবশ্যক?
বাংলাদেশে প্রত্যেক নির্ধারিত সীমার অধিক আয়কারী চাকুরিজীবীর জন্য সঠিক সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চাকুরীজীবিদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য ও দলিলপত্র প্রয়োজন হয়, যা সঠিকভাবে প্রস্তুত না থাকলে রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা কিংবা জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়। এই প্রবন্ধে চাকুরিজীবীদের আয়কর রিটার্নে কোন কোন তথ্য প্রদান করা আবশ্যক সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
চাকুরীজীবীদের রিটার্নে প্রয়োজনীয় তথ্য
একজন ব্যক্তি করদাতা বা চাকুরীজীবিদের রিটার্ন প্রস্তুতকালে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান না করলে অথবা তথ্য গোপন করলে জরিমানা কিংবা জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য রিটার্নে কি কি তথ্য প্রদান করা আবশ্যক সে সম্পর্কে প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতার সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
টিআইএন বা টিন (TIN) সার্টিফিকেট
প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতার জন্য একটি বৈধ টিন (TIN) নম্বর থাকা আবশ্যক। একজন চাকুরীজীবি বা ব্যক্তি করদাতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর-এর ওয়েবসাইট থেকে করদাতা হিসেবে নিজেকে রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারেন ।
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা ও চাকুরীজীবি করদাতাদের রিটার্ন ফাইলের সঙ্গে NID নম্বর উল্লেখ আবশ্যক। অন্যথায় রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।
নিয়োগকর্তার সার্টিফিকেট
একজন চাকুরিজীবিকে অবশ্যই তার রিটার্নে চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত বেতন সার্টিফিকেটের তথ্য প্রদান করতে হবে, যেখানে মাসিক বেতন, বোনাস, ভাতা, কর কর্তনের পরিমাণ, এবং চাকুরী থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য সকল সুবিধা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকে।
ব্যাংক বিবরণী
চাকুরীজীবিকে অবশ্যই তার ব্যাংক হিসাব বিবরণীর তথ্য অবশ্যই রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। যদি চাকুরিজীবী ব্যাংক থেকে সুদ আকারে আয় পেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে সুদ আয়ের প্রমাণসহ ব্যাংক বিবরণী জমা দিতে হয়।
ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য
বাংলাদেশে প্রচলিত আয়কর আইন অনুযায়ী কিছু কিছু ব্যয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এজন্য সকল ব্যয়ের রসিদ ও কাগজপত্র সংরক্ষণ করা উচিত। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ করছাড় প্রাপ্তি সহজ হয়।
বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য
রিটার্ন প্রস্তুত করার সময় বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করা আবশ্যক। বিশেষত, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, জীবন বীমা, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। এইসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে করছাড় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সম্পদ বিবরণী
চাকুরীজীবিদের মধ্যে যারা নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পদের মালিক, তাদেরকে অবশ্যই এনবিআর নির্ধারিত ফর্মে সম্পদ ও দায় বিবরণী জমা দিতে হবে। অন্যথায় করদাতা জরিমানার সম্মুখীন হতে পারেন।
অন্যান্য আয়ের তথ্য
চাকুরিজীবিদের রিটার্নে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্যান্য আয়ের তথ্য যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। যদি চাকুরীর বাইরে আয়ের কোনো প্রকার উৎস না থেকে থাকে তাহলে এর প্রয়োজন নেই।
উপসংহার
চাকুরীজীবীদের আয়কর রিটার্নে সঠিক তথ্য প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিটার্ন দাখিল শুধু আইনি বাধ্যবাধকতাই নয়, এটি একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্বও। যথাযথ কাগজপত্র প্রস্তুত রেখে সময়মতো কর রিটার্ন দাখিল করলে আইনগত জটিলতা এড়ানো যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি কর প্রোফাইল তৈরি হয়, যা ব্যাংক ঋণ, পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে। চাকুরীজীবিদের কর সংক্রান্ত সকল তথ্যের জন্য বিডিট্যাক্সেশনের সাথেই থাকুন। ট্যাক্স এখন, যখন তখন সহজ।
Comments (0)