উৎসে কর্তনকৃত কর জমাদানের সময়সীমা এবং ব্যর্থতায় জরিমানা
উৎসে কর কর্তন (Tax Deducted at Source - TDS) সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের একটি কার্যকর পদ্ধতি, যেখানে করদাতার আয়ের একটি অংশ উৎসে কর্তন/সংগ্রহ করা হয় এবং সরকারী কোষাগারে জমা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক প্রণীত উৎসে কর বিধিমালা ও আয়কর আইনের মাধ্যমে উৎসে কর কর্তন ও জমাদানের সময়সীমা এবং ব্যর্থতার ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান সুনির্দিষ্টভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ব্লগে আমরা উৎসে কর্তনকৃত কর জমাদানের সময়সীমা এবং ব্যর্থতার জন্য নির্ধারিত জরিমানা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
উৎসে কর্তিত কর জমাদানের সময়সীমা
আয়কর আইনের সপ্তম অংশের বিধান অনুসারে কর্তনকৃত অথবা সংগ্রহকৃত উৎসে করের সকল অংক সরকারী কোষাগারে নিম্নবর্ণিত সারণী মোতাবেক জমা করতে হবে;
ক্রমিক নং |
কর্তন ও সংগ্রহের সময় |
সরকারী কোষাগারে জমাদানের তারিখ |
(১) |
(২) |
(৩) |
ক। |
অর্থবৎসরের জুলাই থেকে মে মাসের যেকোনো কর্তন বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে |
কর্তন বা সংগ্রহের মাসের শেষে পরবর্তী ০২ (দুই) সপ্তাহের মধ্যে |
খ। |
অর্থবৎসরের জুন মাসের ১ম থেকে ২০তম দিনের যে কোনো দিনের কর্তন বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে |
কর্তন বা সংগ্রহের দিনের পরবর্তী ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে |
গ। |
অর্থবৎসরের জুন মাসের অন্যান্য যেকোনো দিনের কর্তন বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে |
কর্তন বা সংগ্রহের পরবর্তী দিন |
ঘ। |
অর্থবৎসরের জুন মাসের শেষ কর্মদিবসে কর কর্তন বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে |
কর্তন বা সংগ্রহের দিন |
উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহে ব্যর্থতার জরিমানা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর ‘উৎসে কর বিধিমালা, ২০২৪’-এর মাধ্যমে উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহে ব্যর্থতার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে জরিমানার বিধান প্রণয়ণ করেছে। উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহে ব্যর্থতার জন্য নিম্নরুপভাবে জরিমানা নির্ধারিত হবে;
(১) ধারা ১১৯ এর ব্যতিক্রম সাপেক্ষে ও আয়কর আইনের অংশ-৭ এ ভিন্নরূপ কোনো বিধান না থাকলে, এই বিধিমালার অধীন কর কর্তন বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে, যার নিকট থেকে কর কর্তন বা সংগ্রহ করা হবে সেই ব্যক্তি রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের হার প্রযোজ্য হার অপেক্ষা ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) অধিক হবে।
(২) ভিন্নরূপ কোনো বিধান না থাকলে, আয়কর আইনের অংশ-৭ এর অধীন কর কর্তন বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে, যার নিকট থেকে কর কর্তন বা সংগ্রহ করা হবে সেই ব্যক্তি চুক্তিমূল্য, বিল, ভাড়া, ফি, চার্জ, রেমুনারেশন, বেতনাদি বা অন্য কোনো অর্থ পরিশোধ (তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন), বাবদ কোনো অর্থ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে গ্রহণ না করলে উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের হার প্রযোজ্য হার অপেক্ষা ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) অধিক হবে।
উপসংহার
উৎসে কর কর্তন বাংলাদেশের আয়কর ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উৎসে কর কর্তন/সংগ্রহে ব্যর্থ হলে এনবিআর জরিমানার বিধানগুলোকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করে থাকে, যা ব্যক্তি করদাতা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝার কারণ হতে পারে। তবে সঠিক সময়ে উৎসে কর্তিত/সংগৃহীত কর জমা করলে খুব সহজেই জরিমানা এড়ানো সম্ভব। উৎসে কর কর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং আয়কর সংক্রান্ত যেকোনো আপডেট সবার আগে পেতে বিডিট্যাক্সেশনের সাথেই থাকুন।
Comments (0)