বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে করের ভূমিকা
অন্যান্য সকল দেশের মত বাংলাদেশের সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রত্যক্ষভাবে করের উপর নির্ভরশীল। বাজেট প্রণয়ন থেকে আয়বন্টন, রাষ্ট্রীয় সকল ব্যয় ও অর্থসংস্থানসহ সকল আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরুপে রাজস্ব বা কর ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
সংগৃহীত কর সরকার অন্যান্য খাতের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় করে থাকে। সেতু, কালভার্ট, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ও সেবাখাতের সকল অবকাঠামো নির্মাণ, নিয়ন্ত্রণ, এবং উন্নয়নে সরকার অভ্যন্তরীণ কর থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যবহার করে থাকে।
শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ
সরকার করের অর্থ দিয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে শিক্ষাসেবা প্রদান করে থাকে। শিক্ষা অবকাঠামো (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইনস্টিটিউশন) নির্মাণ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালন করে থাকে। এছাড়াও শিক্ষাখাতের বিভিন্ন ভাতা, বৃত্তি, বেতন, টিউশন ফি, এবং ভর্তুকি প্রদান করার ক্ষেত্রে সরকার সংগৃহীত কর আয় থেকে ব্যয় করে থাকে।
স্বাস্থ্যসেবা
একটি দেশের সাধারণ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে সরকার সরকারি হাসপাতাল, প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামসহ স্বাস্থ্যসেবার পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে কর একটি প্রধান উৎস।
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন এবং জনসাধারণের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম, (যেমনঃ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, যৌতুকবিরোধী সচেতনতা, বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত সচেতনতা ইত্যাদি) পরিচালনা করার জন্য সরকার কর রাজস্ব ব্যবহার করে থাকে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে থাকে।
দারিদ্র্য বিমোচন
সরকার কর রাজস্বের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যা দেশের অভ্যন্তরে সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে। এর ফলে দেশের জনসাধারণের আয় বৈষম্য হ্রাস পায়, যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে সহায়ক।
কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন
কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য সরকার কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করে নতুন শিল্পাঞ্চল, প্রযুক্তি পার্ক এবং উদ্যোক্তা সহায়তা প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি এবং প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার সংগৃহীত করের অর্থ হতে অর্থায়ন করে থাকে। সাথে সাথে, সরকার করনীতির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য কর রেয়াত বা প্রণোদনা প্রদান করা হয়, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে থাকে।
সামগ্রিক ব্যয় নির্বাহ
সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ সামগ্রিক ব্যয় নির্বাহ করে থাকে আদায়কৃত করের মাধ্যমে। সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমসহ সকল ব্যয় নির্বাহের প্রধান উৎস হচ্ছে আদায়কৃত অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রকারের কর।
উপসংহার
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে করের ভূমিকা অনস্বীকার্য। উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের জন্য কর আদায় ও ব্যবহারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা অপরিহার্য। তাই কর দেওয়া শুধুমাত্র নাগরিকদের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সুসভ্য জাতি গঠনে সম্মানজনক অংশগ্রহণ। কর সম্পর্কিত সকল তথ্য এখন দেশের বৃহত্তম আয়কর পোর্টাল বিডিট্যাক্সেশনে। আয়করের সকল তথ্য, সবার আগে, বিডিট্যাক্সেশনে। ট্যাক্স এখন, যখন তখন সহজ।
Comments (0)