অগ্রিম কর পরিশোধের ঘাটতিতে করদাতা কর্তৃক প্রদেয় সুদ
অগ্রিম কর পরিশোধের ঘাটতিতে করদাতা কর্তৃক প্রদেয় সুদ
বাংলাদেশে বিদ্যমান আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ১৬২ অনুযায়ী করদাতার অগ্রিম কর প্রদান, করের ঘাটতি ও সুদের হার সম্পর্কিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর এই ধারা অনুযায়ী কর পরিশোধ প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছতা বজায় রাখে এবং করদাতাদের অগ্রিম কর প্রদানে উৎসাহিত করে থাকে। এখানে আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ১৬২ অনুযায়ী অগ্রিম কর পরিশোধের ঘাটতিতে করদাতা কর্তৃক প্রদেয় সুদ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
ধারা ১৬২ অনুযায়ী অগ্রিম কর পরিশোধের ঘাটতিতে করদাতা কর্তৃক সুদ ধার্য্যের কারণ
আয়কর আইনের ধারা ১৬২-এর মূল লক্ষ্য করদাতাদের উপর কর নির্ধারণ এবং কর প্রদানের ঘাটতি অনুযায়ী সুদ প্রদান নিশ্চিত করা। কোন করবর্ষে করদাতার উৎসে কর্তনকৃত কর ও অগ্রিম কর্তনকৃত করের মোট পরিমাণ প্রাক্কলনকৃত করের বা নিয়মিত করের পরিমাণের ৭৫% না হলে, অর্থাৎ এর চেয়ে কম হলে করদাতার বিপরীতে অবশ্যই সরল সুদ প্রযোজ্য হবে।
ধারা ১৬২ অনুযায়ী অগ্রিম কর ধার্য্য হওয়ার নিয়ম বা প্রযোজ্যতাঃ
উদাহরণ-১
ক) কোন করবর্ষে করদাতার মোট নিয়মিত অথবা ধার্য্যকৃত করের পরিমাণ ৩,০০,০০০/- টাকা
খ) করদাতা কর্তৃক অগ্রিম ও উৎসে কর পরিশোধের পরিমাণ ২,৩০,০০০/- টাকা।
এখানে ক তে উল্লেখিত ৩,০০,০০০.- টাকার ৭৫% হারে আসে ২,২৫,০০০/- টাকা। করদাতার খ) তে পরিশোধিত করের পরিমাণ ২,৩০,০০০/- টাকা। যা ৭৫% এর বেশি হওয়ায় সুদ প্রযোজ্য নয়।
উদাহরণ-২
ক) কোন করবর্ষে করদাতার মোট নিয়মিত অথবা ধার্য্যকৃত করের পরিমাণ ৩,০০,০০০/- টাকা
খ) করদাতা কর্তৃক অগ্রিম ও উৎসে কর পরিশোধের পরিমাণ ২,২০,০০০/- টাকা।
এখানে ক তে উল্লেখিত ৩,০০,০০০.- টাকার ৭৫% হারে আসে ২,২৫,০০০/- টাকা। করদাতার খ) তে পরিশোধিত করের পরিমাণ ২,২০,০০০/- টাকা। যা ৭৫% এর কম হওয়ায় সুদ প্রযোজ্য
অগ্রিম কর পরিশোধের ঘাটতিতে করদাতা কর্তৃক সুদ ধার্য্যের নিয়মঃ
উৎসে কর্তনকৃত কর ও অগ্রিম কর্তনকৃত করের মোট পরিমাণ প্রাক্কলনকৃত করের বা নিয়মিত করের পরিমাণের ৭৫% না হলে বা কম হলে করদাতাকে পার্থক্যের ১০% হারে সুদ প্রদান করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কিছু নিয়ম ও শর্ত বিদ্যমান। যা নিম্নরূপঃ
১। করদাতা যদি কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করে তাহলে সুদ পরিগণনার ক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ ৫০% অধিক হবে অর্থাৎ ১৫% হারে পরিগণনা করতে হবে।
২। ১০% অথবা ১৫% হার যেটি হোক সুদ ধার্য্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বৎসরের সুদ ধার্য্য করা যাবে।
৩। করদাতার সুদ ধার্য্যকরণ কাজটি মাসিক ভিত্তিতে করা হবে।
৪। সুদ ধার্য্যের ক্ষেত্রে সুদের সময় আয়বর্ষ শেষ হওয়ার ১ জুলাই হতে বিবেচনা করা হবে।
ধারা ১৬২-এর প্রভাব ও করদাতাদের জন্য গুরুত্ব
ধারা ১৬২ করদাতাদের জন্য কর প্রদানের সময়ানুবর্তিতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করে এবং কর ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখে। করদাতাদের জন্য এটি অগ্রিম কর প্রদানের একটি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে, যাতে পরবর্তীতে কর ঘাটতি হলে তাকে সুদ দিতে হয়। এর মাধ্যমে করদাতারা সময়মত কর পরিশোধের তাগিদ অনুভব করেন যা কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
অগ্রিম কর পরিশোধের ঘাটতিতে করদাতা কর্তৃক প্রদেয় সুদ সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১: অগ্রিম কর প্রদানের ঘাটতির কারণে কত শতাংশ সুদ প্রদান করতে হবে?
উত্তর: অগ্রিম কর প্রদানের ঘাটতির কারণে করদাতাকে ঘাটতির পরিমাণের উপর ১০% হারে সুদ প্রদান করতে হবে। তবে, যদি করদাতা কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেন, তবে এই সুদ ১৫% হারে ধার্য্য হবে।
প্রশ্ন ২: করদাতার উপর সর্বোচ্চ কত বছরের সুদ প্রযোজ্য হবে?
উত্তর: ধারা ১৬২ অনুযায়ী করদাতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছরের সুদ প্রযোজ্য হবে, ১০% বা ১৫% হার অনুযায়ী।
প্রশ্ন ৩: করবর্ষ শেষে সুদ গণনা কোন তারিখ থেকে শুরু হবে?
উত্তর: করবর্ষ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী বছরের ১ জুলাই থেকে সুদ গণনা শুরু হবে।
Comments (0)