অগ্রিম করের পরিমাণ ও জমার সময়
অগ্রিম কর বা Advance Tax হলো এমন একটি কর ব্যবস্থা যেখানে করদাতাকে নির্ধারিত করবর্ষের শেষ হওয়ার আগেই সম্ভাব্য আয়ের উপর কর প্রদান করতে হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বাংলাদেশে আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১৫৪ অনুযায়ী নির্দিষ্ট আয়ের শর্ত পূরণে অগ্রিম আয়কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অর্থাৎ সর্বশেষ নিরূপিত আয়বর্ষে কোনো করদাতার করযোগ্য আয়ের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে তাকে অবশ্যই অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে।
অগ্রিম করের পরিমাণ ও জমার সময় (ধারা-১৫৫)
এনবিআর ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ধারা ১৫৫ অনুযায়ী বাংলাদেশী করদাতাদের অগ্রিম আয়করের পরিমাণ ও জমার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই ধারা অনুসারে নিম্নোক্ত শর্তানুযায়ী অগ্রিম করের পরিমাণ ও জমার সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে;
(১) উপ-ধারা (৩) এর বিধান সাপেক্ষে এবং ধারা ১৫৪ এর বিধানসমূহ অক্ষুণ্ণ রেখে, কোনো চলমান অর্থ বর্ষে করদাতার পরিশোধযোগ্য ন্যূনতম অগ্রিম কর (ক-খ) এর সমপরিমাণ হবে। যেখানে,
ক = সর্বশেষ আয়বর্ষে করদাতার মোট করযোগ্য আয়ের উপর পরিশোধযোগ্য কর যা উক্ত করবর্ষে প্রযোজ্য হারে পরিগণনা করা হয়েছে;
খ = উৎসে কর্তনকৃত বা সংগ্রহকৃত কর বা পরিশোধকৃত অগ্রিম করের পরিমাণ।
(২) অগ্রিম কর হিসাবে পরিশোধযোগ্য ন্যূনতম কর নিম্নবর্ণিতভাবে ৪ (চার) টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ্য হইবে, যথা:-
করবর্ষের তারিখ |
পরিশোধতব্য অগ্রিম কর |
১৫ সেপ্টেম্বর |
২৫% |
১৫ ডিসেম্বর |
২৫% |
১৫ মার্চ |
২৫% |
১৫ জুন |
২৫% |
(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তারিখ যদি সরকারি ছুটির দিন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট অগ্রিম করের কিস্তি পরবর্তী কর্মদিবসে পরিশোধ করতে হবে।
(৪) এক্ষেত্রে কোনো করদাতা কোনো কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, করদাতার কোনো দায় ক্ষুণ্ন না করে, তার পরবর্তী কিস্তির সাথে অপরিশোধিত কিস্তি বা তার অংশবিশেষ যুক্ত করে করদাতা অগ্রিম কর পরিশোধ করতে পারবেন।
(৫) যেক্ষেত্রে করদাতা প্রাক্কলন করেন যে, অগ্রিম করের কিস্তি উপ-ধারা (১) ও (২) এর অধীন পরিগণনাকৃত কর থেকে কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে করদাতা উপকর কমিশনার বরাবর একটি প্রাক্কলন দাখিল করতে পারবেন এবং ইতোঃপূর্বে পরিশোধকৃত কোনো কিস্তির সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে প্রাক্কলন অনুসারে কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।
অগ্রিম কর পরিশোধে ব্যর্থতার জরিমানা
কোনো করদাতার কর যদি আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১৫৪-এ বর্ণিত অগ্রিম কর পরিশোধের বিধানসমূহ প্রযোজ্য হয়, সেক্ষেত্রে তাকে উপরোক্ত শর্ত মেনে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় কর কর্তৃপক্ষ করদাতার উপর ধারা ২৬৯ অনুযায়ী জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। এই ধারা অনুযায়ী নিম্নরূপভাবে জরিমানা আরোপিত হতে পারে;
কর নির্ধারণ সম্পর্কীয় কোনো কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় উপকর কমিশনার এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোনো করদাতা;
(ক) কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই, ধারা ১৫৪ এর বিধান অনুযায়ী অগ্রিম কর পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন; বা
(খ) ধারা ১৫৫ এর অধীন করদাতা করদায়ের বিপরীতে অসত্য প্রাক্কলন উপস্থাপন করেছেন
সেক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত করদাতার উপর জরিমানা আরোপ করতে পারেন। যা করদাতার প্রদেয় কর ও পরিশোধিত করের অধিক হবে না।
উপসংহার
অগ্রিম করের মাধ্যমে এনবিআর করদাতাদের করদায় কিস্তি আকারে পরিশোধ করার সুযোগ করে দেয়। যার ফলে করদাতার করদায় পরিশোধ করা সহজ হয়। অপ্রত্যাশিত জরিমানা এড়ানোর জন্য অগ্রিম কর প্রযোজ্য এমন করদাতাদের উচিত সময়মতো অগ্রিম কর পরিশোধ করা। আয়কর সংক্রান্ত সকল প্রকার তথ্যের জন্য বিডিট্যাক্সেশনের সাথে থাকুন।
Comments (0)